Skip to main content

আমার ফেলে আসা দিনগুলো-১

মাদ্রাসায় তখন এইটের বৃত্তির টাকা হাতে পেয়েছি। কিছু টাকা টিউশনি করেও হাতে জমেছে। এমনই শীতের শেষ সময়। পড়াশুনার কোন চাপ নেই। ইয়ার-দোস্তদের সাথে সারাদিন আড্ডা মেরে বেড়াই। খুলনার সবচেয়ে বড় মহল্লা টুটপাড়া। এই মহল্লার সর্বপশ্চিমে দোলখোলা বাজার। হাটাপথে আমার বাসা থেকে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। বড় চাচার সাথে সেই বাজারে শৈশবে প্রায়ই যাওয়া হত। সেখানে ভাল চইঝাল আর মানকচু পাওয়া যেত। বাজারের একপ্রান্ত শহরের ভেতর মিশেছে, অন্যপ্রান্ত পূর্ব-পশ্চিম মূখী একটি গলিতে এসে দাড়িয়েছে। এই মোড়ের পাশে একটি পুরনো দোতলা পাকা ইমারত। আমার দোস্ত ও ক্লাসমেট জাকির এই বাড়ির ছেলে। তার আব্বা সোনার দোকানদার। জাকিরের তাই হাতখরচ নিয়ে চিন্তা নেই।
এই যে তসবিরখানা আপনারা দেখছেন। এটার একটা শানে নযুল আছে। জাকির আর আমার একসাথে ফটো তোলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু একটা বিশেষ কারণে এই ফটো তোলা হয়েছিল।
আপনারা হয়ত ধারণা করতে পারছেন না ... ঠিক কি ছিল সেই কারণ?
এটা একটা ভাব দেখানো কিংবা ফুটানি দেখানো ছবি। ছবির ক্যাপশন হওয়া উচিত- এই যে আমরা কি সুন্দর ঘড়ি পিন্দেছি। বর্তমান ক্যাপশন- একদিন আমরা ডিজিটাল ছিলাম।
একদিন সকালে জাকির বলল, দোস্ত বাজারে ক্যাসিও নামে জাপানী ডিজিটাল ঘড়ি আইছে। চল আমরা ঘড়ি কিনি।
খুলনা ভৈরব নদীর তীরে বড় বাজার। সেখানে ঘড়ি পট্টিতে এ দোকান সে দোকান ঘুরে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। ঘড়ি পছন্দ হয় তো দামে মিলেনা আবার দাম কম তো ঘড়ি পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত দুইটা ঘড়ি কেনা হল। হাতে কিছু অতিরিক্ত টাকা ছিল। তা দিয়ে ফালুদা খেলাম এবং বাজার থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। হঠাৎ জাকির প্রস্তাব করল। দোস্ত চল ঘড়ি কেনা উপলক্ষে একটা ফটুক তুলি। তখন খুলনা স্টেডিয়ামের নতুন গ্যালারি বানানো হয়েছে এবং গ্যালারির নিচে একটি পরিচিত স্টুডিও থেকে এই ঐতিহাসিক ফটো তোলা হয়। ফটো তোলার সময় ক্যামেরাম্যান জামার হাতা সুন্দর করে ভাজ করে দেন যাতে ঘড়িটা ছবিতে মূখ্য হয়।
এই হচ্ছে ১৯৮৬ সালে আমাদের ডিজিটাল হওয়ার প্রথম প্রয়াস।

Comments

Popular posts from this blog

ক্যালিগ্রাফি বনাম ক্যালিওগ্রাফী

সকালে ওয়ার্ড কমিশনারের সচিব মহোদয় ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন গতকালের পুরন করা ফরমে শব্দটা কি ক্যালিগ্রাফি নাকি ক্যালিওগ্রাফী হবে? বললাম, কি বানান ওখানে দেয়া আছে, তিনি বললেন, ক্যালিগ্রাফি। বললাম, জ্বি, বানান ওটাই হবে। তিনি সন্দেহের সুরে জানালেন, এতদিনতো এটা ক্যালিওগ্রাফী বলে জানতাম! আমি হেসে বললাম, আমরা কত কিছু যেভাবে ধারণা করি, আসলে তা সেরকম নয়।  সেই নব্বই দশকের কথা, বাংলা সাহিত্য পরিষদে এক মাসিক সাহিত্য সভায় ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে লেখা পাঠ করে বিপদে প ড়ে যাই। পাঁচজন আলোচক আমাকে আচ্ছা করে ধুইয়ে দিলেন, এত অল্প জেনে কেন এমন একটি কঠিন বিষয়ে লিখতে গেলাম, কারন বিষয়টির বানানই আমি ভুল করেছি, তারা বললেন, শুদ্ধ বানান হবে 'ক্যালিওগ্রাফী'। আমি তখন একেবারে আনকোরা লেখক। এত সমালোচনা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, দাড়িয়ে বললাম, আমার লেখার সমালোচনার জবাব দিতে চাই। অনুষ্ঠানের সভাপতি তখন বোধহয় আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন, তিনি অনুমতি দিলেন। সেই জবাবি ভাষা একটু রসকষহীন হয়েছিল, এমন কি জবাব দেয়ার মধ্যেই একজন অভিধান নিয়ে এলেন পাশের লাইব্রেরি কক্ষ থেকে, অবশেষে হলভর্তি লেখক শ্রোতা মানতে বাধ্য হলেন, শব্দট...

দুটো নতুন ক্যালিগ্রাফি

Monogram of Bangladesh Calligraphy Foundation এক বন্ধুর স্ত্রী-সন্তান বাসায় এসেছিল বেড়াতে । ক্যালিগ্রাফি দেখে তারা খুব খুশি । তাদের আগ্রহ মেটাতে দুটো নতুন ক্যালিগ্রাফি করলাম । অবশ্য ডিজিটাল একটা আগেই করেছিলাম । এক. সাব্বি হিসমা-আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। ক্যানভাসে এক্রিলিক রঙ। দুই. আল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ। হ্যান্ডমেড পেপারে একরামিন রঙ। ডিজিটাল ক্যালিগ্রাফি

নতুন ক্যালিগ্রাফি ট্রেডিশনাল স্টাইলের বই

প্রিয় বন্ধুরা একটি নতুন ক্যালিগ্রাফি ট্রেডিশনাল স্টাইলের বই লিখেছি। নাম- সুলস লিপিশৈলী । এটি একটি গবেষণা গ্রন্থ এবং খুব সহজে ক্যালিগ্রাফি শেখার বই।