মাদ্রাসায় তখন এইটের বৃত্তির টাকা হাতে পেয়েছি। কিছু টাকা টিউশনি করেও হাতে জমেছে। এমনই শীতের শেষ সময়। পড়াশুনার কোন চাপ নেই। ইয়ার-দোস্তদের সাথে সারাদিন আড্ডা মেরে বেড়াই। খুলনার সবচেয়ে বড় মহল্লা টুটপাড়া। এই মহল্লার সর্বপশ্চিমে দোলখোলা বাজার। হাটাপথে আমার বাসা থেকে প্রায় ঘন্টাখানেকের পথ। বড় চাচার সাথে সেই বাজারে শৈশবে প্রায়ই যাওয়া হত। সেখানে ভাল চইঝাল আর মানকচু পাওয়া যেত। বাজারের একপ্রান্ত শহরের ভেতর মিশেছে, অন্যপ্রান্ত পূর্ব-পশ্চিম মূখী একটি গলিতে এসে দাড়িয়েছে। এই মোড়ের পাশে একটি পুরনো দোতলা পাকা ইমারত। আমার দোস্ত ও ক্লাসমেট জাকির এই বাড়ির ছেলে। তার আব্বা সোনার দোকানদার। জাকিরের তাই হাতখরচ নিয়ে চিন্তা নেই।
এই যে তসবিরখানা আপনারা দেখছেন। এটার একটা শানে নযুল আছে। জাকির আর আমার একসাথে ফটো তোলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু একটা বিশেষ কারণে এই ফটো তোলা হয়েছিল।
আপনারা হয়ত ধারণা করতে পারছেন না ... ঠিক কি ছিল সেই কারণ?
এটা একটা ভাব দেখানো কিংবা ফুটানি দেখানো ছবি। ছবির ক্যাপশন হওয়া উচিত- এই যে আমরা কি সুন্দর ঘড়ি পিন্দেছি। বর্তমান ক্যাপশন- একদিন আমরা ডিজিটাল ছিলাম।
একদিন সকালে জাকির বলল, দোস্ত বাজারে ক্যাসিও নামে জাপানী ডিজিটাল ঘড়ি আইছে। চল আমরা ঘড়ি কিনি।
খুলনা ভৈরব নদীর তীরে বড় বাজার। সেখানে ঘড়ি পট্টিতে এ দোকান সে দোকান ঘুরে প্রায় দুপুর হয়ে গেল। ঘড়ি পছন্দ হয় তো দামে মিলেনা আবার দাম কম তো ঘড়ি পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত দুইটা ঘড়ি কেনা হল। হাতে কিছু অতিরিক্ত টাকা ছিল। তা দিয়ে ফালুদা খেলাম এবং বাজার থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। হঠাৎ জাকির প্রস্তাব করল। দোস্ত চল ঘড়ি কেনা উপলক্ষে একটা ফটুক তুলি। তখন খুলনা স্টেডিয়ামের নতুন গ্যালারি বানানো হয়েছে এবং গ্যালারির নিচে একটি পরিচিত স্টুডিও থেকে এই ঐতিহাসিক ফটো তোলা হয়। ফটো তোলার সময় ক্যামেরাম্যান জামার হাতা সুন্দর করে ভাজ করে দেন যাতে ঘড়িটা ছবিতে মূখ্য হয়।
এই হচ্ছে ১৯৮৬ সালে আমাদের ডিজিটাল হওয়ার প্রথম প্রয়াস।
- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
Comments