ক্যালিগ্রাফির জন্য ট্রেডিশনাল কালি তৈরি :
আপনি মধ্যপ্রাচ্যের অথবা আরব দেশগুলোতে নজর দিলে দেখবেন, একধরণের কালি ব্যবহার করা হয়, যেটা পরিবেশ বান্ধব, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং ক্যালিগ্রাফির জন্য বিশেষ উপযোগী। পশ্চিমা ক্যালিগ্রাফিতে রাসায়নিক উপাদানে তৈরি কালির ব্যাপক ব্যবহার হয়। প্রাচ্য ও পশ্চিমা কালির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, এক. পশ্চিমা কালির থেকে আরবি কালির স্থায়িত্ব ও উজ্জ্বলতা বেশি। এবং দুই. পশ্চিমা কালি কাগজে ব্যবহারের পর সেটা সংশোধন ও মুছে ফেলা যায় না এবং দীর্ঘ মেয়াদে কাগজের টেম্পার বা ধারণ ক্ষমতা বা গঠন প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়। অন্যদিকে আরবি কালির ব্যবহার সহজ ও সংশোধনযোগ্য। এছাড়া কলম দিয়ে লেখার সময় কলমের মুভমেন্ট বা গতিপ্রকৃতি ফুটে ওঠে এবং বিশেষ সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করে।
আমরা বাজারে এক্রিলিক অথবা ওয়াটার কালার বা পোস্টার কালার বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রঙিন কালি সহজে তৈরি করতে পারি। এটা আধা রাসায়নিক বলা যেতে পারে। ছাত্রদের জন্য এসব রঙ সহজলভ্য ও হাত পাকানোর জন্য ভাল। এছাড়া মশক বা অনুশীলন করার জন্য চাইনিজ বা ইন্ডিয়ান কালি ব্যবহার করা ভাল।
আরবি কালি তৈরিতে ভুষা কালি, আরবি গাম অথবা চিনি এবং নিশাত মৌলিক উপাদান। এছাড়া গোলাপ পানি বা কেওড়া পানি তরল করতে ব্যবহার হয়, আপনি চাইলে ডিস্টিল ওয়াটার বা নিদেন পক্ষে ট্যাপের পানিও ব্যবহার করতে পারেন।
মূল প্রশ্ন হল ভূষা কালির রয়েছে বহুত রকম ফের। আপনি প্রদীপের থেকে সেটা সংগ্রহ করতে পারেন। মেমার সিনান(মৃ.১৫৮৮) তুর্কি স্থাপনা এমনভাবে তৈরি করেন, যেন সেখানে প্রদীপাধার থেকে ছাত্ররা ভুষা কালি সংগ্রহ করতে পারে। আমাদের গ্রাম-বাঙলায় মাটির হাড়িতে কাঠের চুলায় রান্নায় বেশ ভুষা কালি পড়ে। আমি বহুবার এ কালি সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছি। এছাড়া তাওয়ায় চাল বিশেষ প্রক্রিয়ায় পুড়িয়ে তা গুড়া করে ভুষা কালি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে আঠা হিসেবে চিনি ব্যবহার করা হয়। আর পোকার হাত থেকে কালি রক্ষার জন্য নিশাত ব্যবহার করা হয়।
আরবি কালির ব্যবহার ও উৎপাদন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে মুসলমানদের আবিস্কার। এখানে কালো কালির কথা বলা হয়েছে। কালোর মাত্রা বিবেচনায় সুরমা থেকে আইভরি ব্লাক গ্রেডের কালি তৈরি করা যায়।
হাতে কুরআন লেখার জন্য বিশেষভাবে ট্রেডিশনাল আরবি কালি ব্যবহার করা হয়। এক অথবা দুই মিমি মাপের কলমের জন্য এই কালি উপযোগী। আলজেরিয়া সফরের সময় উস্তাদ ইয়াকুব উরদুনী আমাকে এক দোয়াত কালি হাদিয়া দিয়েছিলেন। তার এই কালি উৎপাদনের কারখানা আছে। এছাড়া তেহরান সফরের সময় মুরাক্কাবে সাবেস্তারি নামে ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফির কয়েক রঙের বেশ কয়েক দোয়াত কালি এনেছিলাম।
কাগজে আরবি ক্যালিগ্রাফি বা বাঙলা ক্যালিগ্রাফি করার ব্যাপক প্রচলন এক সময় বাংলাদেশে ছিল। এখন দোয়াতের কালির ব্যবহারই প্রায় উঠে গেছে। তবে ক্যালিগ্রাফির জন্য আরবি কালির কোন বিকল্প নেই। আপনি চাইলে তা হাতে তৈরি করে নিতে পারেন। বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন আপনাকে ক্যালিগ্রাফি শেখার এবং এর যাবতীয় সাপোর্ট দিবে।
যোগাযোগ করতে পারেন-০১৮১৯৬৭৬০২৭
Comments