




























জাজিরার পাহারাদারেরা









অনেকদিন থেকে ইচ্ছে ছিল নারকেল জাজিরা দেখতে যাব। শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত এ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে গেলাম। রাত ১০টার গাড়িতে রওনা দিলাম কক্সবাজার। ঢাকার ফকিরাপুলে অনেকগুলা বাস কাউন্টার আছে, দেখে শুনে যে কোন একটায় উঠলেই হয়, ভাড়া ৪৫০/= টাকা। ভ্রমণের সময় জ্বর-বমি-পেটের অসুখ ইত্যাদির জন্য কিছু ওষুধ রাখা ভাল। গাড়িতে খাবার জন্য নাস্তা-পানিও নিতে পারেন, পথে চৌদ্দগ্রামে বাস যে রেস্তরাঁয় বিরতি দেয়, সেখানে খাবারের দাম আকাশচুম্বি। তবে কফিটা বেশ ভাল। কক্সবাজার পৌছতে প্রায় ৯-১০টা বেজে যায়। অনেক হোটেল, সৈকত ঘেসে একটা হোটেলে উঠা যায়। দাম-দস্তুর করে নিলে ৫শ থেকে ৩শ টাকার মধ্যে দুই বেডের রুম পাওয়া যায়। আমি হোটেল ডায়মন্ড উঠলাম, পাঁচতলায় সমুদ্রমুখী ভিআইপি রুম, ভাড়া গুনতে হল ৬শ টাকা, ২টা রুম, ৪-৫ জনের পরিবারের জন্য আরামদায়ক। একটু ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে হিমছড়ি আর ইনানী সৈকত দেখতে যাওয়া যায়। সেটা বেশ দূরের পথ। তবে কাছের লাবনি পয়েন্টে গিয়ে দুপুরের গোসল সেরে নেয়া যায়। বিকেল ৩টার দিকে সিএনজি ভাড়া করে হিমছড়ি এবং ইনানি দেখতে গেলাম। সিএনজি ভাড়া ৩শ থেকে ৫শ টাকা। যাওয়ার পথে প্রথমে হিমছড়ি এবং পরে ইনানি গেলে সুবিধা হয়। সিএনজিওলার সাথে অতিরিক্ত ২ ঘন্টা সময় চুক্তি করলে ঝামেলামুক্ত থাকা যায়। আমি সাড়ে পাঁচশ টাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত হিমছড়ি ও ইনানি ঘুরে আসলাম। রাতে সমুদ্র সৈকত বা বার্মিজ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়। ভোরে নারকেল জাজিরা (সেন্ট মার্টিন দ্বীপ) গেলাম। আগে থেকে বুকিং দিলে ভাল হয়। আমি দ্বীপে একরাত থাকার চুক্তিতে বুকিং দিয়েছিলাম। একদিনের জন্য-১০৫০/= এবং একরাত দ্বীপে অবস্থান করে পরদিন ৩টার জাহাজে ফিরে আসলে ১৩৫০/=। তবে এই রেট কম-বেশি হতে পারে। তিনটি জাহাজ আছে, এক- কেয়ারি সিন্দবাদ, দুই-কুতুবদিয়া এবং তিন-কাজল। ক্রম অনুসারে জাহাজগুলোর গতির পার্থক্য রয়েছে। একসাথে সবগুলো ছাড়ার পর দ্বীপে সবার আগে পৌছায় সিন্দবাদ, সময় লাগে প্রায় ২ঘন্টা। এরপর কুতুবদিয়া প্রায় ৩ ঘন্টা এবং কাজলের প্রায় ৫ ঘন্টা। প্রায়ই কুতুবদিয়া ও কাজল যান্ত্রিক সমস্যায় পড়ে, এজন্য সিন্দবাদে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত জাজিরা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে মধ্য মার্চ হচ্ছে সবচেয়ে ভাল সময়। দ্বীপের হোটেল অবকাশে আমি উঠলাম। পশ্চিম পাশের এই হোটেলের পাশেই হুমায়ুন আহমেদের সমুদ্র বিলাস। খুবই মনোরম পরিবেশ। দুপুরে সমুদ্রে গোসল, বিকেলে সৈকতে বেড়ানো, সূর্যাস্ত দেখা, সন্ধ্যার পর সৈকতে চিংড়ি-কাকড়া-চান্দা মাছ ভাজি খাওয়ার মজাই আলাদা, আরো খেতে পারেন চিংড়ির পিয়াজু। রাতে হোটেলে খাবার গ্রহণের পর আবার সৈকতে বেড়ানো, তখন মনে একধরণের আধ্যাত্মিক ভাব আসে। রাতে ছয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হোটেলে জেনারেটর বাতি থাকে। তবে প্রতি রুমে একটা করে হ্যারিকেন এবং মশার কয়েল দেয়া হয়। খাবার পানি সামান্য লবনাক্ত। রাতের খাবারের পর ঝাউবাগানের খাটিয়ায় শুয়ে ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে ঘুম এসে যায়। শরীর জুড়ানো বাতাসে মনে হয়, আহা! এত শান্তি কোথায় ছিল এতদিন।
ফজরের আজানের সুরে ঘুম ভেঙ্গে আধো আলোয় মোহনীয় পবিত্র ভাব জেগে ওঠে মনে। খুব ভোরে পশ্চিম সৈকতের দক্ষিণ দিকে লাল কাকড়ার মিছিল দেখা যায়। কাছে গেলে দ্রুত গর্তে ঢুকে যায়। সুর্যোদয় দেখতে দেখতে প্রকৃতির জেগে ওঠা অনুভব করা যায়। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এই নারকেল জাজিরায় কতদিন আগে মানুষ বসতি গেড়েছে তা সঠিক ভাবে জানা নেই। তবে দুপুরের তপ্ত রোদে নারকেল বিথির ছায়ায় ডাবের পানি সত্যিই অসাধারণ অনুভব আনে হৃদয়ে।
পুরো দ্বীপ ঘুরে আমার মনে হচ্ছিল এখানে থেকে যাই বাকিটা জীবন। দ্বীপের দক্ষিণ দিকে অল্প দূরে ছেড়াদ্বীপ। ভাটার সময় হেটে হয়ত যাওয়া সম্ভব। তবে ঘাট থেকে ট্রলারে বা স্পীডবোটে যাওয়া যায়।
কক্সবাজার ফিরে সময় থাকলে দুলাহাজরা সাফারি পার্ক, বৌদ্ধবিহার ঘুরে দেখা যায়।
Comments